আসছে নতুন দিন,
আসছে নতুন পেশা কারিগরির ভূবন আমায় দেখায় স্বপ্ন-আশা
কাজের মাঝে আত্মতৃপ্তি, কাজের মাঝে ভক্তি
সচল হব দক্ষতায়, আসবে অর্থনৈতিক মুক্তি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা অনুশীলনের মাধ্যমে নানা ধরনের কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারি। তবে অর্জিত সেই দক্ষতার মাধ্যমে শুধু উপার্জন কিংবা সুনাম বৃদ্ধিই যেন আমাদের লক্ষ্য হয়ে না যায়। কীভাবে আমাদের অর্জিত দক্ষতাকে দেশের জন্য কল্যাণকর কাজে বিনিয়োগ করা যায়, তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। তবেই আমাদের দক্ষতা সবার জন্য বয়ে আনবে আলোকিত দিন।
পরিবর্তনশীল পেশায় বদলে যাওয়া চাহিদা
তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, সময়ের সঙ্গে কাজের ধরন ও পেশায় অনেক ধরনের পরিবর্তন আসছে প্রতিনিয়ত। একসময় আমাদের বাড়িতে বাড়িতে আয়োজন করে মুড়ি ভাজা হতো, পিঠা বানানো হতো। বিয়ে, গায়েহলুদে ডালা সাজানো, মাটির কলসে আলপনা আঁকা, ঘটা করে গান গেয়ে কনের হাতে মেহেদী পরানো, স্টেজ সাজানো, কতসব রীতি-রেওয়াজ, সাজসজ্জার আয়োজন চলত সপ্তাহব্যাপী। আমাদের মা, চাচি, খালা, আপা, ভাবিরা মিলে এই কাজগুলো করতেন। এখন তারা সবাই ব্যস্ত থাকেন অফিস, আদালত, কারখানায় কিংবা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে। ফলে মুড়ি ভাজা চলে গেছে কারখানায়, মুড়ি এখন প্যাকেটজাত হয়ে তাঁই করে নেয় পাড়ার মুদিদোকানির সাজানো পসরায়। একইভাবে বাড়ি সাজানোর ভার এখন চলে যাচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার হাতে।
চিত্র ২.১: পেশার রূপান্তর
এ রকমভাবে কেক, পিঠা বা দুপুরের খাবার সরবরাহ, লোকজ সংস্কৃতির চর্চা, লোকজ সামগ্রী তৈরি ও বিপণন দেশি বিদেশি গাছের চারা উৎপাদন ও বিক্রয়, পোষা প্রাণীর পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ, ফ্যাশন হাউসের অনলাইন ডিসপ্লে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট নির্মাণ ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্র দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। ব্যস্ততার কারণে নাগরিক জীবনে এসব কাজ ও কাজের সেবা প্রদানকারীর পদ ও পেশা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের প্রয়োজন বা চাহিদা থেকেই তৈরি হচ্ছে এসব নতুন নতুন কাজের অভিনব ক্ষেত্র।
এবারে আমরা সময়ের চাহিদার কারণে আমাদের নিজ এলাকার পরিচিত কোনো ব্যক্তি কিংবা পরিবার। আত্মীয় স্বজনদের কেউ পরিবর্তনশীল এ রকম কোনো পেশায় কাজ করছেন কি না তা খুঁজে বের করব। তার সঙ্গে আলাপ করে নতুন ধরনের এই কাজ বা পেশার অভিজ্ঞতার গল্প শুনব এবং ছক ২.১ পূরণ করব।
ছক ২.১: নতুন পেশার গল্প
পেশার বর্ণনা | |
তার এই পেশায় আসার পেছনে গল্প | |
কীভাবে এই পেশায় কাজের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন | |
এই পেশায় কী কী দক্ষতা কাজে লাগছে | |
এই পেশায় কী কী মূল্যবোধ তিনি মেনে চলেন | |
এই পেশায় কাজের পরিসর কতটুকু | |
এই পেশার চাহিদা কেমন | |
এই পেশা নিয়ে তার স্বপ্ন বা পরিকল্পনা |
চাহিদার সঙ্গে পেশায় দক্ষতার পরিবর্তন
ভোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছ, কোনো একটি কাজ যথাযথভাবে বা নিখুঁতভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে পারাই হলো উক্ত কাজের দক্ষতা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ওপর ভর করে শিক্ষা ও দক্ষতায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বিদ্যমান প্ল্যাটফর্ম এবং দক্ষতার ক্ষেত্রগুলো রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে এই পরিবর্তনের হার পূর্ববর্তী কয়েক দশকের চেয়েও বেশি। কিছু পেশা বা চাকরি পড়ে যাচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে,
চিত্র ২.২: প্রযুক্তির কারণে একই পেশায় নতুন দক্ষতা যুক্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে নতুন নতুন পেশার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। চাকরি, ব্যবসা, আত্মকর্মসংস্থান সর্বক্ষেত্রেই প্রাধান্য পাচ্ছে দক্ষতার বিষয়টি। 'শুধু সনদ বা সার্টিফিকেট নয়, বরং আমি কী করতে পারি' এটিই এখন বিশ্ববাজারে বিবেচ্য বিষয়। এক দশক আগেও আমরা দেখেছি, অনেক লোক বাসাবাড়ির অলিগলিতে হাঁক দিয়ে তার পণ্য বিক্রি করছে; কিন্তু এখন আমরা দেখি, তারা ছোট অথবা বড় রিচার্জেবল মাইক ব্যবহার করেন। ফলে তার আর উচ্চস্বরে হাঁক দিয়ে পন্য বিক্রি করতে হচ্ছে না, এতে গলার ওপর চাপ কমে গেছে। তেমনি পরিবর্তন দেখি, অন্যান্য পেশাতেও। যেমন: সেলুনকর্মী এখন কাঁচি ছাড়াও ট্রিমার ব্যবহার করে চুল কাটেন। এছাড়া এখানে এসেছে অনেক প্রযুক্তি, যা সেলুনকর্মী হিসেবে যে পেশাটি ছিল, সেই ক্যারিয়ারে আরও সম্ভাবনা উন্মোচন করে। একটু লক্ষ করলে তোমরা দেখতে পাবে, আমাদের চারপাশের মানুষের পেশার পরিবর্তনগুলো। যত ও সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা এ বিষয়ে অনেক কিছু জেনেছ, এখানে আমরা আরেকটু বিস্তারিতভাবে জানব।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পেশার ক্ষেত্রে এ পরিবর্তনগুলো আরও বেশি চোখে পড়ে। যেমন: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষিকাজে লেগেছে আরও আধুনিকতার ছোঁয়া। ফসল উৎপাদনে কৃষকেরা ব্যবহার করছে ড্রোন, যা দিয়ে তারা সার ও কীটনাশক ছিটানোর কাজ করেন। বিভিন্ন দেশে গাড়িচালকরা তাদের যাত্রী অনুসন্ধান, অবস্থান ও গন্তব্য জানতে পারছেন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।
শিল্পক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক যন্ত্র এবং রোবট। যে শ্রমিক আগে বসে বসে পণ্য প্যাকেটজাত করতেন, সেই একই কাজ এখন করা হচ্ছে রোবট যন্ত্র পরিচালনা করে। করোনা মহামারির সময় থেকে আরও নতুন নতুন পেশার সৃষ্টি হয়েছে। 'হোম ডেলিভারি' এর মধ্যে অন্যতম। আর এই হোম ডেলিভারিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার বিশাল বাজার।
দলগত কাজ
দক্ষতার পরিবর্তন সেলুন বা পার্লারে কাজ করে এমন একজন কর্মীর কর্মক্ষেত্র ও কাজ বিশ্লেষণ করো। নিচের ছকটি পর্যবেক্ষণ। করো এবং উদাহরণটি বিবেচনায় নিয়ে দেখো আর কী কী পরিবর্তন যুক্ত করা যায়। এরপর তোমাদের পরিচিত আরেকটি কাজের ক্ষেত্র বেছে নাও এবং উক্ত ক্ষেত্রে কাজের ধরন ও দক্ষতার পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করো। |
---|
ছক ২.২: কাজের ধরন ও দক্ষতার পরিবর্তন
পেশার নান | কাজের ধরন পরিবর্তন | দক্ষতার পরিবর্তন |
---|---|---|
সেলুন বা পার্লার কর্মী |
|
|
|
কেস ১: সানজিদার কৃষিবিজ্ঞানী হয়ে ওঠা
আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে ছোট একটি গ্রামে ছিল সানজিদার বসবাস। তার গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ছিলেন কৃষক। তারা ঐতিহ্যগত চাষাবাদ কৌশলের ওপর নির্ভর করছিলেন, যা বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথেষ্ট ছিল না। ফলে গত কয়েক বছর ফসল ভালো হচ্ছিল না। বিষয়টি তাকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। সানজিদা মনে মনে ভাবে, তার গ্রামের কৃষকরা যদি কৃষির পেছনের বিজ্ঞান বুঝে চাষাবাদ করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তাদের এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
একদিন তাই সে তার শিক্ষকের কাছে জানতে চায়, ‘কৃষিবিজ্ঞানী কী করেন, কীভাবে কৃষিবিজ্ঞানী হওয়া যায়?’
শিক্ষক তার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তর দিলেন, 'একজন কৃষিবিজ্ঞানী কৃষি ও বিজ্ঞান সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন। যার মধ্যে ফসল উৎপাদন, গাছের বংশগতি, মাটির স্বান্ত, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, পশু প্রজনন এবং অন্যান্য অনেক বিষয় রয়েছে'।
শিক্ষকের কথা শুনে সানজিদা একটি গভীর ইচ্ছা অনুভব করে এবং সে বুঝতে পারে যে, গ্রামের কৃষকদের সাহায্য করা এবং তাদের ফসলের উন্নতি করার স্বপ্ন সফল করতে তাকে একজন কৃষিবিজ্ঞানী হতে হবে।
স্কুল থেকে ফিরে সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শেয়ার করে। বাবা-মা তার স্বপ্নকে উৎসাহিত করেন। সানজিদা কৃষি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য নানা উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। সে জানতে পারে, একজন পেশাদার কৃষিবিজ্ঞানী হওয়ার জন্য কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন। সানজিদা স্কুলের পাঠ শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়। এরপর স্নাতকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্ভিদ শারীরবিদ্যা, শস্য ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে। যথাসময়ে উচ্চশিক্ষার কোর্সও সমাপ্ত করে।
এরপর কৃষিবিষয়ক আরও জানা ও গবেষণার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের আবেদন করতে থাকে এবং একটি নামকরা কৃষি বিশ্ববিদালয়ে ভর্তির সুযোগও পেয়ে যায়। সেখানে সে তার অধ্যাপকদের সঙ্গে হাতে কলমে মাটি, ফসল ও বীজের উৎপাদন-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের গবেষণা পরিচালনা করার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
সানজিদা দেশে ফিরে আসার পর কৃষি নিয়ে আরও গবেষণার পরিকল্পনা করে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় টেকসই কৃষি এবং কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার- সংক্রান্ত গবেষনা পরিচালনা করে এবং বিভিন্ন সম্মেলনে তার ফলাফল উপস্থাপন করে।
অবশেষে কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে সানজিদা কর্মজীবন শুরু করে। সে তার উচ্চশিক্ষা, গবেষণার অভিজ্ঞতা, নতুন ধারণা এবং উদ্ভাবনী চাষের কৌশল নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসে। তার স্বপ্ন অনুযায়ী সে কৃষকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ শুরু করে এবং তাদের ফসলের উন্নতি করতে পরিবেশবান্ধব আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে ঐতিহ্যগত অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহারে সহায়তা করে। অনেকেই সানজিদার এই অবদানের প্রশংসা করেন এবং তার কাজের জন্য অসংখ্য পুরস্কারও পায়। এভাবেই সানজিদা প্রমাণ করে যে, সঠিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পড়াশোনা এবং দৃঢ়সংকল্পের মাধ্যমে যে কেউ সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে।
দলগত কাজ
দক্ষ হয়ে ওঠার পথপরিক্রমা সানজিদা বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার জন্য কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং কী ধরনের শিক্ষাগত ডিগ্রি তাকে অর্জন করতে হয়েছে? প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য সে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয়েছে তা দলগত আলোচনার মাধ্যমে খুঁজে বের করো। |
---|
ভবিষ্যৎ পেশার ধারণা
আমাদের পোশাকশিল্প অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিমুখী শিল্প। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে পেশাজীবী বা কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের কাজ, যেমন: সেলাই মেশিন অপারেশন, ফেব্রিক কাটিং, প্যাটার্ন মেকিং, মান নিয়ন্ত্রণ, পরিদর্শন এবং প্যাকেজিংয়ের মতো হাজারটা কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে থাকে। এমনকি গবেষণা, ডিজাইন এবং উন্নয়নের (development) কাজও রয়েছে, যেখানে একজন নতুন নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কাজ করে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা, বিক্রয় এবং বিপণনেও রয়েছে চাকরির সম্ভাবনা। আবার একইভাবে খুচরা দোকানে পোশাকের সরবরাহ, বিতরণ এবং তত্ত্বাবধানেও কাজ করতে হয় অনেকের।
তবে প্রযুক্তির কারণে পোশাকশিল্পও দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কিছু কাজ ইতোমধ্যে স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠেছে, অর্থাৎ মানুষের পরিবর্তে মেশিন কাজগুলো করছে। যেমন: রোবট দ্রুত এবং সঠিকভাবে কাপড় সেলাই করছে। আগে
দশজন কাটিং মাস্টার এক দিনে যতগুলো কাপড় কাটতে পারত, এখন একটি মেশিন তার চেয়েও বেশি কাপড় কাটতে পারে। তাহলে আমরা অনুমান করতে পারি, আগামীতে কর্মীদের অনেক কাজ হয়তো যন্ত্রের দখলে চলে যাবে। অটোমেশনের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে পোশাক তৈরি ও বিক্রির পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে উৎপাদনের আগে পোশাকের প্রোটোটাইপ ডিজাইন করার জন্য। এটি ডিজাইনারদের দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় করতে দেয়। প্রযুক্তি পোশাক বিক্রির পদ্ধতিতেও পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যেমন: অনলাইনে কেনাকাটা দিন দিন বাড়ছে এবং ভার্চুয়াল ট্রাই-অন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রেতা পোশাক কেনার আগে তাদের কেমন দেখাবে, সেটাও জেনে নিতে পারছেন।
চিত্র ২.৩: পোশাকশিল্পে কাজের ধরন ও দক্ষতার পরিবর্তন
পোশাক শিল্পের বিকাশ অব্যাহত থাকায় কিছু নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যা আগে ছিল না। যেমন: প্রোগ্রামিং করা এবং প্রযুক্তিনির্ভর মেশিন রক্ষনাবেক্ষণের কাজ করা। ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টে আরও কাজের সুযোগ তৈরি হবে। কারণ, পোশাকশিল্প অননা ও উদ্ভাবনী নতুন পণ্য তৈরি করতে চায়। তাছাড়া ই-কমার্সে আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে। আগামীতে আরও বেশি মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য বাজারজাত ও বিক্রি করার জন্য নতুন মাধ্যমের সূচনা করবে। পাশাপাশি কিছু কাজের ক্ষেত্র বা পেশা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। যেমন: ফ্লোর ইন চার্জ, সুপারভাইজার, কাটিং মাস্টার ইত্যাদি।
সামগ্রিকভাবে যারা পোশাকশিল্পে কাজ করতে আগ্রহী তাদের জন্য এই শিল্প কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে সে সম্পর্কে ধারণা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রযুক্তি এবং প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত হতে পারে এবং তাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
চিত্র ২.৪: দক্ষতার উন্নয়ন ও পদোন্নতি
ধরা যাক, তুলি গোমেজ এসএসসি পাশ করার পর একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেছিল। পাঁচ বছর পর কর্মস্থলে তার উন্নতির জন্য নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন হলো। তখন তুলি গোমেজ অফিসের অনুমতি নিয়ে একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে। পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সে একটি সনদ পায় এবং কর্মক্ষেত্রে ফিরে ডিজাইনার পদে পদোন্নতি লাভ করে।
একক কাজ
হকের উদাহরণ ব্যতীত পোশাকশিল্পের যেকোনো একটি পেশা নির্বাচন করে সেই পেশার একজনের সঙ্গে আলোচনা করো এবং অন্যান্য সূত্র থেকে তথ্য অনুসন্ধান করে নিচের ছকটি পূরণ করো। |
---|
ছক ২.৩: বিভিন্ন পেশায় দক্ষতার পরিবর্তন
পেশার ক্ষেত্র | পেশার নাম | বর্তমান কাজের বিবরণ | ভবিষ্যৎ পেশার ক্ষেত্র | দক্ষতার পরিবর্তন |
---|---|---|---|---|
পোশাক শিল্প | সুইং অপারেটর | পোশাক সেলাই যন্ত্র ব্যবহার করা | রোবটের মাধ্যামে সেলাই করা | রোবট পরিচালনা করা, প্রোগ্রামিং করা |
পোশাক বিক্রয় কর্মী | দোকানে বিতরণ ও বিক্রয় পরিচালনা করা | অনলাইনে বিতরণ ও বিক্রয় পরিচালনা করা | ইন্টারনেট ব্যবহার, বিক্রয় ওয়েবসাইট পরিচালনা করা | |
| ||||
|
খাতভিত্তিক পেশার ভিন্নতা ও দক্ষতা
কৃষি
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো এবং আমাদের দেশেও কৃষি খাতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দেশীয় শ্রম বাজারে কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি বিদেশে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে এই খাতে বিভিন্ন পেশার চাহিদা রয়েছে যেমন: অভিজ্ঞ কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, ফসল পরিচালক, পশু চিকিৎসক, পরিবেশ বিশ্লেষক, ফসল প্রক্রিয়াজাতকারক ইত্যাদি। চলো জেনে নিই, একজন অভিজ্ঞ কৃষক হতে হলে কোন কোন দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। প্রথমেই তাকে অর্জন করতে হবে ফসল উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুত করার জ্ঞান ও দক্ষতা। এ ছাড়া অর্গানিক এবং পরিকল্পিত উপায়ে ফসল উৎপাদনের কৌশল, আধুনিক পদ্ধতিতে ফসলের পরিচর্যা, সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের কৌশল, ফসল সংরক্ষন এবং সর্বোপরি বাজারজাতকরণ করার দক্ষতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। অন্যদিকে কৃষিবিজ্ঞানী হওয়ার জন্য কৃষিতে নতুন নতুন উদ্ভাবন, কৃষিপদ্ধতি,
চিত্র ২.৫: কৃষিভিত্তিক পেশার দক্ষতায় পরিবর্তন
ফসল উৎপাদন ও পরিচালন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া কৃষিপ্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার দক্ষতা প্রয়োজন।
প্রযুক্তি
আমরা দেখছি, প্রযুক্তির প্রসারের পাশাপাশি দেশে ও বিদেশে প্রযুক্তিভিত্তিক পেশার চাহিদাও বাড়ছে। এই বিবেচনায় বর্তমান ও ভবিষ্যতে কাঙ্ক্ষিত পেশাগুলোর মাঝে প্রযুক্তি সেবা, গ্রাফিক ডিজাইনিং, প্রোগ্রামিং, সাইবার সুরক্ষা, ডাটা এন্ট্রি, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদির অনেক চাহিদা রয়েছে। অভিজ্ঞ গ্রাফিক ডিজাইনাররা প্রিন্ট, ফিল্ম, ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল, ভিজ্যুয়াল এবং অডিওসহ অন্যান্য টুল ও মাধ্যম ব্যবহার করে অভিনব ও আকর্ষণীয় উপায়ে তথ্য খাতের জন্য অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট প্রস্তুত করেন। গ্রাফিক ডিজাইনাররা কম্পিউটার গেমস, চলচ্চিত্র, মিউজিক ভিডিও, প্রকাশনা ও বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের জন্য গ্রাফিকস, নন্দনচিত্র, স্পেশাল ইফেক্ট, অ্যানিমেশন ও অন্যান্য ভিজ্যুয়াল তৈরি করে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে
চিত্র ২.৬: প্রযুক্তিভিত্তিক পেশার দক্ষতায় পরিবর্তন
নিত্যনতুন সফটওয়্যার ও অ্যাপ, যা সম্পর্কে তাদের খোঁজখবর রাখতে হয় এবং নতুন সফটওয়্যারে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এটি হলো বর্তমান সময়ের প্রবল প্রতিযোগিতার বাজার। এই বাজারে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেকে হালনাগাদ প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে কাজ করতে পারাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
সেবা
প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষকতার মতো সেবাধর্মী পেশায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। গতানুগতিক সেই জগ-মগ আর চক-টক এই সময়ের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে আর টিকে থাকতে পারছে না। নতুন প্রজন্মের
চিত্র ২.৬: সেবাভিত্তিক পেশার দক্ষতায় পরিবর্তন
শিক্ষার্থীদের হাজারো কৌতুহলী প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য শিক্ষকের জানা-শোনার পরিসর অনেক বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে জটিল তথ্য ও তত্ত্ব দৃশ্যমান করে তুলতে হচ্ছে; নিতে হচ্ছে অনলাইন ক্লাস; অনলাইন মিটিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দিতে হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট সংক্রান্ত নানা ধরনের নির্দেশনা। সুতরাং তাকেও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত হালনাগাদ দক্ষতা অর্জন করতে হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও পেশার পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, প্যারামেডিকস, কেয়ার গিভার ইত্যাদি পেশায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই একজন দক্ষ ডাক্তার হওয়ার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশদ জ্ঞান ও দক্ষতার পাশাপাশি জীবন বাঁচানোর কাজ করতে তাকে স্থির এবং চূড়ান্ত মানসিক স্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতাও থাকতে হবে। আগে যে অপারেশনে সার্জারি করতে হতো, এখন তা লেজার রশ্মির মাধ্যমেই করা হয়; যা চালনা (অপারেট) করার দক্ষতা তাকে অর্জন করে নিতে হচ্ছে। একজন ফার্মাসিস্ট হতে হলে তাকে ওষুধ উৎপাদন, বিক্রয় এবং বিভিন্ন রোগের জন্য ওষুধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। এর পাশাপাশি ওষুধ সম্পর্কিত সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা সম্পর্কেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করার দক্ষতা থাকতে হবে। প্যারামেডিকদের জনগণের সেবা প্রদান করার জন্য নিউক্লিয়ার মেডিসিন, ফিজিকস ও বায়োকেমিস্ট্রি ইত্যাদি বিষয় জানতে হয়। অন্যদিকে সেবা খাতের হাউজকিপিং পেশার চাহিদা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাউজকিপিং পেশাজীবীরা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নানা দিক যেমন: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, লগ্নি ও অন্দরসজ্জার মতো কার্যক্রমের সকল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যারা বুদ্ধিদীপ্ত, চৌকস এবং সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে পারে, তাদের এ ধরনের পেশায় অনেক চাহিদা রয়েছে।
শিল্প
উৎপাদন খাতের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সব দেশেই গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা। এসব কারখানায় প্রয়োজন হয় অনেক প্রকৌশলীর। প্রকৌশলী হতে হলে প্রয়োজন প্রকৌশলের জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা। এ ছাড়া কারখানার কাজে অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের বা চাকরির সুযোগ রয়েছে, যেমন: উৎপাদন কর্মী, প্যাকেজিং কর্মী, যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইত্যাদি। আবার প্লাম্বার ও পাইপফিটার পেশাজীবীরা কনস্ট্রাকশন, আবাসিক ও শিল্প খাতের বিভিন্ন স্থাপনায় তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ সরবরাহ ও সঞ্চালনের সংযোগ লাইন স্থাপন, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকেন। প্লাম্বার ও পাইপফিটার পেশাজীবীরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ও নির্মাণশিল্পের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেবল আবাসিক স্থাপনা নয়, তেল শোধনাগার বা গ্যাসক্ষেত্রসহ সব ধরনের শিল্পকারখানা ও উন্নয়ন প্রকল্পেও তারা কাজ করেন। দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্লাম্বারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
চিত্র ২.৬: শিল্প খাতের কাজে কর্মীর দক্ষতার ধরন
দলগত কাজ
দলগত আলোচনার মাধ্যমে ছকটিতে বিভিন্ন খাতের মোট সাতটি পেশার নাম লেখো এবং এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা চিহ্নিত করো। |
---|
ছক ২.৪: পেশার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা
ক্রম | পেশার নাম | প্রয়োজনীয় দক্ষতা |
---|---|---|
১. | পরিচ্ছন্নতা কর্মী | ভ্যাকুয়াম ক্লিনার (কার্পেট, পর্দা পরিষ্কার করার যন্ত্র), ওয়াইপার (ফ্লোর, গ্লাস পরিষ্কার করার যন্ত্র) ইত্যাদির যথাযথ ব্যবহার |
২. | ||
৩. | ||
৪. | ||
৫. | ||
৬. | ||
৭. |
আগামীর পেশায় যে সব দক্ষতা আমাদের প্রয়োজন
শুরুর দিকের আলোচনা থেকে কাজের জগতে ক্রমাগত পরিবর্তন সম্পর্কে আমরা কিছুটা ধারণা পেয়েছি। আর এই পরিবর্তনগুলো কীভাবে আমাদের ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র বা চাকরির সুযোগগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে, তা উপলব্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি বড় পরিবর্তন আমরা লক্ষ করেছি, আর তা হলো- কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার। কিছু কাজ যা মানুষ নিজের হাতে করত, এখন তা মেশিনের মাধ্যমে করা হচ্ছে। ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কিছু পরিচিত পেশা। তোমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে একটু ভেবে দেখতো, কী কী পেশা শীঘ্রই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, এটি অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে ৮৫ মিলিয়ন চাকরি হয়তো আর থাকবে না। তারা আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে স্বাস্থ্যসেবা, নবায়নযোগ্য শক্তি (renewable energy), প্রযুক্তি এবং শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে প্রায় ২৭ মিলিয়ন নতুন চাকরি তৈরি হতে পারে। যেমন: প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সফটওয়্যার উন্নয়ন, সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা বিশ্লেষণের মতো নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাই কিছু চাকরি হারিয়ে গেলেও নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই ভবিষ্যৎ পেশার পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য মৌলিক এবং প্রযুক্তিগত দুই ধরনের দক্ষতা আমাদের অর্জন করা খুবই জরুরি।
মৌলিক দক্ষতা
কিছু কিছু দক্ষতা আমাদের সকল পেশাতেই প্রয়োজন হয়, যা আমাদের কাছে অপ্রযুক্তিগত দক্ষতা বা মৌলিক দক্ষতা হিসেবে পরিচিত। মৌলিক দক্ষতা বলতে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে বোঝায়, যা ব্যক্তিকে সঠিকভাবে কাজটি করতে সক্ষম করে তুলে। মৌলিক দক্ষতার মধ্যে রয়েছে দলগত কাজ (team work), আলোচনা এবং দ্বন্দ্ব সমাধান, যোগাযোগ (communication), সুদ্ধচিশ্বন (critical thinking), সৃজনশীলতা (creativity), সমস্যা সমাধান (problem solving), সিদ্ধান্ত গ্রহণ (decision making), পরিকল্পনা প্রণয়ন (planning) ইত্যাদি দক্ষতা। যেমন: সুদ্ধচিন্তন দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এর মাধ্যমে জটিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তেমনি সৃজনশীলতা (creativity) অনেক প্রয়োজনীয় দক্ষতা, যার মাধ্যমে একজন প্রচলিত ধারণার বাইরে চিন্তা করে সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান বের করতে পারে। অন্যদিকে যোগাযোগের দক্ষতা অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি এবং বৃদ্ধি করে, যার ফলে কর্মক্ষেত্রে সম্মান, মর্যাদা ও প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।
কারিগরি বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা
সুনির্দিষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতার উদাহরণ হলো প্রযুক্তিগত দক্ষতা, যা নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন বা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয়। যেমন: স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহারে এবং রোগীদের মানসম্মত সেবা প্রদানের জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা অপরিহার্য। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ও বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য। যেমন: একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের কথা ধরা যাক। তাকে অবশ্যই প্রযুক্তিগত দক্ষতা যেমন: কোডিং ও বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা, কোডিং, সফটওয়্যার তৈরি, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি অর্জন করতে হবে। এর পাশাপাশি তাকে অবশ্যই সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং সহযোগিতার মতো মৌলিক দক্ষতাও থাকতে হবে। তাই আমরা বলতে পারি, একবিংশ শতাব্দীতে কর্মজগতে সফল হওয়ার জন্য সবার মৌলিক দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা উভয়ই অপরিহার্য।
একক কাজ
২০৩০ সালে বিদ্যমান থাকতে পারে, এমন একটি পেশা নিজের জন্য নির্বাচন করো। উক্ত পেশায় কী কী দক্ষতা অর্জন করতে হবে তার তালিকা তৈরি করো। |
---|
ছক ২.৫: ২০৩০ সালের সম্ভাব্য পেশার দক্ষতা
পেশার নাম | দক্ষতার নাম |
---|---|
ব্যবসা | ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন |
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন | |
বাজেট প্রণয়ন | |
বাজারের চাহিদা বিশ্লেষণ | |
আমাদের দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সাথে পরিচয়
আমাদের চারপাশে এমন অনেক পেশাজীবী দেখতে পাই, যারা হাতে কাজ করেন, মেশিন পরিচালনা করেন, সুপারভাইজ করেন, প্রসেসিং করেন, প্যাকেটিংসহ অনেক কাজ করে থাকেন। তোমরা কি জানো, তারা কোথায় পড়াশোনা করেছেন? কোথা থেকে এ ধরনের কাজের যোগ্যতা এবং দক্ষতা অর্জন করেছেন? তাদের এই দক্ষতাগুলো হলো কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষণ। মূলত প্রযুক্তির সান্নিধ্যে থেকে হাতে-কলমে বা বাস্তবে কাজ করাই হলো কারিগরি শিক্ষা। এই শিক্ষার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, কৃষি ও কলকারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখান থেকে এ ধরনের যোগ্যতা এবং দক্ষতা অর্জন করা যায়। এককথায় বলা যায়, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষন হলো (Technical and Vocational Education and Training বা TVET) আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাক্রমেরই একটি ধারা, যেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীকে চাকরি বা কর্মসংস্থানের জন্য উপযোগী জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা হয়। কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীল হওয়ার উপায় সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও অনুশীলন করানো হয়। কর্মী ও কর্ম-পরিবেশের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কীভাবে সতর্কতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে তাও হাতে কলমে শেখানো হয়। উন্নত দেশগুলোতে কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিল্প ও কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো হয়েছে। উৎপাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ব্যবহার ও কৌশল প্রয়োগ করে জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে এবং স্বনির্ভরতা অর্জনে সরাসরি সহায়তা করে কারিগরি শিক্ষা। বাংলাদেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানসহ বৃত্তিমূলক মোট ২৫১৭টি, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অধীনে ৯৮টি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত সাত হাজার বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ, মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মূলত পলিটেকনিক/মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত রেজিষ্ট্রার্ড অর্গানাইজেশন, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ইত্যাদি হিসেবে পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি কোর্স করা যায়।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ক্যারিয়ার গড়া
আমরা এবার জেনে নিই, কখন এবং কীভাবে এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হওয়া যায়। প্রথমতো, আমরা যারা কারিগরি জ্ঞান-দক্ষতা পছন্দ করি, যারা লেখাপড়ার পাশাপাশি দ্রুত কর্মজগতে প্রবেশ করতে চাই, তারা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে ভিত্তি হিসেবে নিতে পারি। টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করে দুই বছর মেয়াদি এসএসসি ভোকেশনাল এবং এসএসসি (ভোকেশনাল) পাশ করে দুই বছর মেয়াদি এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্সে আমরা যেকোনো টিএসসিতে ভর্তি হতে পারব। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০৪টি টিএসসি রয়েছে এবং আরও নতুন টিএসসি (৩২৯টি) তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসএসসি বা এইচএসসি পাশ করার পর যেকোনো শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি ৫০টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। এর সঙ্গে সরকার আরও ২৩টি নতুন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট তৈরির কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। চারটি বিভাগে মেয়েদের জন্য বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আরও নতুন চারটির কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। আরও চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে। কৃষি বিষয়ক শিক্ষার জন্য ১৮টি সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট রয়েছে। এছাড়া ৫২৭টি রেজিস্টার্ড ট্রেনিং অর্গানাইজেশন দ্বারা স্বল্পমেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। চার মাস মেয়াদি এসব কোর্সে সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে দেওয়া হয় জাতীয় দক্ষতা মানসম্পন্ন সনদপত্র। এই সনদপত্র দিয়ে দেশে এবং বিদেশে কর্মজগতে প্রবেশ করা অনেক সহজ।
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহীরা বছরের বিভিন্ন সময়ে ভর্তি হতে পারে। মজার বিষয় হলো, অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পরই এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায় এবং স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। এবার এসো আমরা শিমুল নামে একজন প্রকৌশলীর গল্প শুনি।
শিমুল ছোটবেলা থেকেই নাট বোল্ট, স্কু ইত্যাদি নাড়াচাড়া করতে ভালোবাসে। ওর বাবার খুব ইচ্ছা বড় হয়ে সে ইঞ্জিনিয়ার হোক। তাই সারা দিন তার মা লেগে থাকেন তার পড়াশোনার পিছনে। কিন্তু শিমুলের মনোযোগ অন্য কাজে। বাড়িতে পানির ট্যাপ কেটে গেলে সেটি ঠিক করা, টিউব লাগানো, গ্যাস লাইনে টাইট দেওয়া ইত্যাদি যত কাজ আছে, সেগুলো সে খুব আনন্দ নিয়ে করে। এসব নিয়ে শিমুলের বাবা-মায়ের অভিযোগের শেষ নেই। শিমুলের এক মামাতো ভাই বশির লন্ডনে থাকেন। তিনি একবার দেশে বেড়াতে এসে শিমুলদের বাড়িতে ওঠেন। শিমুলের মা তার কীর্তিকাণ্ড নিয়ে তার কাছে অভিযোগ শুরু করেন। বশির অবাক হয়ে বলেন, তাই নাকি? তাহলে তো ওর ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। শিমুলের বাবা ভ্রু কুঁচকে রাগের সুরে বললেন, 'মানে কী?' বশির বললেন, ‘ফুফাজান, আপনি ওকে একটি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে পাইপ ফিটিং কোর্সে ভর্তি করে দিন, সে খুব মেধাবী প্লাম্বার হবে। আমি ওকে লন্ডনে নিয়ে যাব। লন্ডনে প্লাম্বারের অনেক চাহিদা, অনেক টাকা বেতন তাদের। সবমিলিয়ে অনেক ভালো থাকতে পারবে।’
কথাগুলো মনে গেঁথে গেল তাদের। শিমুলকে তারা টিএসসিতে ভর্তি করে দিলেন। শিমুল নিজের ভালোলাগা থেকে মনে আনন্দ নিয়ে সেখানে পড়ালেখা করার পর অনুশীলন করা শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের (ইন্ডাস্ট্রির) মানদন্ডে কীভাবে কাজ করতে হয়, সেগুলোও সে ভালোভাবে রপ্ত করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিতে (কন্ট্রাক্টে) কাজ করা শুরু করে। এর পাশাপাশি পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সেও ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে থাকে। শুধু তাই নয়, অতিথি শিক্ষক হিসেবে টিএসসিতে ক্লাস নেওয়ার কাজও শুরু করে। এ বিষয়ে ইন্টারনেট থেকে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে নিজের ডিজাইনে পরীক্ষণ (এক্সপেরিমেন্ট) চালায়। কিছুদিনের মধ্যেই কাজের চাপ সামাল দেওয়ার জন্য সে এলাকার কিছু ছেলেকে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে; শুধু কাজ নয়; কাজের সঙ্গে সে নীতি-নৈতিকতা (নিষ্ঠা, সততা, সময়ানুবর্তিতা) এবং যোগাযোগের আচরণিক দিকগুলোর (etiquette and manners) উপরও প্রশিক্ষণ দেয়। ফলে দাঁড়িয়ে যায় সুশিক্ষিত, নীতিবান, সময়নিষ্ঠ এবং পরিশ্রমী বড় একটি প্লাম্বার টিম। এলাকায় এবং এলাকার বাইরেও সুনামের সঙ্গে এই টিম কাজ চালাচ্ছে বছর দুয়েক ধরে। শিমুল এখন প্লাম্বার সাল্লাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বড় প্রকৌশলী। অনলাইন এবং সরাসরি (অফলাইন) দুদিক থেকেই প্রচুর কাজের প্রস্তাব আসছে প্রতিদিন। তার কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ আয় হয়, তাতে সে লন্ডনে তার বশির ভাইয়ের কাছে যাওয়ার কথা ভাবছেই না। বশির ভাই ফোন দেওয়ার পর সে বলেছে, 'এলাকায় আমার এখন অনেক প্রসার; আমি স্বপ্ন দেখি কিছুদিনের মধ্যেই সারা দেশে আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যাবে এবং তারও কিছুদিন পর ভিনদেশ থেকে আমার প্রতিষ্ঠানের ডাক আসতে শুরু করবে। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমার দেশের নাম ছড়িয়ে পড়বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।' এ কথা বলে সে তৃপ্তির হাসি হাসতে লাগল। সেই হাসিতে তার স্বপ্নগুলোও খেলা করছে যেনা
দলগত কাজ
শিমুলের কেস পর্যালোচনা এবং তোমাদের পরিচিত বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করো। এবার বাংলাদেশে বিদ্যমান কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কোর্স সম্পর্কিত নিচের ছকটি পূরণ করো। |
---|
ছফ ২.৬: কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা
কোর্সের নাম | কোর্সের সময়কাল | কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরন |
---|---|---|
এসএসসি ভোকেশনাল | — বছর | টিএসসি |
এইচএসসি ভোকেশনাল | — বছর | _____ |
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও আগামীর দক্ষতার অন্বেষণ
আমরা আমাদের সহপাঠীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করব। এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হলো, বর্তমানে এখানে কোন ধরনের দক্ষতার প্রশিক্ষণ হচ্ছে তা দেখা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অর্থাৎ আগামীতে কোন ধরনের দক্ষতা নিয়ে কাজ করা হবে তা খুঁজে বের করা। আমরা পূর্বের অধ্যায়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে জেনেছি এবং অনুশীলন করেছি সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে পরিদর্শন চেকলিস্ট তৈরি করব (লিস্টের একটি নমুনা 'কিছু তথ্য জেনে নিই'-এ দেওয়া আছে)। এরপর উক্ত চেকলিস্টের তথ্য বিবেচনায় রেখে আমাদের পরিদর্শন কার্যক্রমটি সম্পন্ন করব। তবে যদি আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা কোনো ছুটির দিনে পরিবার/অভিভাবকের সঙ্গে অথবা একই এলাকার শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক কাজ করে, এমন কোনো প্রতিষ্ঠান/ সংস্থা পরিদর্শন করব।
পরিদর্শন পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়:
১. তারিখ ও সময় নির্ধারণ
২. কমিটি গঠন
৩. যে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে, সেখানে পত্র দিয়ে অবহিত করা
৪. পরিদর্শন চেকলিস্ট তৈরি
৫. পরিদর্শন শেষে ফিডব্যাক সেশন পরিচালনার পরিকল্পনা
৬. ধন্যবাদ পত্র প্রেরণ ইত্যাদি
একক কাজ
একটি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে নিজের অনুভূতি লেখো। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় তোমার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, থাকলে পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখে শিক্ষকের কাছে জমা দাও। |
---|
পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষাকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বর্তমান বিশ্বে চাকরির বাজারে উৎপাদনশীল খাতই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে এবং এখানে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে। আধুনিক প্রযুক্তির এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন দক্ষ জনবল, যা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমেই গড়ে তোলা সম্ভব। তা ছাড়া উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন কোর্স ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে। দেশ এবং বহির্বিশ্বে যেকোনো খাতেই দক্ষ জনশক্তির চাহিদা অনেক। তাই আমরা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে নিজের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
স্বমূল্যায়ন
ক) তোমার এলাকায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা উল্লেখ করো।
খ) তোমার এলাকায় কোন কোন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক কাজের চাহিদা রয়েছে বলে মনে করো?
গ) কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের একটি করে পেশা নির্বাচন করো এবং নির্বাচিত পেশায় আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার কী ধরনের সুযোগ আছে তা উল্লেখ করো।
ঘ) মনে করো, তুমি কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে পরবর্তী পড়াশোনা করতে চাও। সে ক্ষেত্রে সেখানে তুমি কোন ধরনের ট্রেড বেছে নেবে? উক্ত ট্রেড পছন্দ বা নির্বাচন করার কারণ কী? উক্ত ট্রেডটি আগামীর শ্রমবাজারে কী ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে তুমি মনে করো।
অধ্যায়ে আমরা যা যা করেছি... ........ [প্রযোজ্য ঘরে টিক (√) চিহ্ন দাও]
কাজসমূহ | করতে পারিনি (১) | আংশিক করেছি (৩) | ভালোভাবে করেছি (৫) | |
১ | কেসস্টাডি থেকে দক্ষ হয়ে ওঠার পথ পরিক্রমা খুঁজে বের করা | |||
২ | কাজের ধরন ও দক্ষতার পরিবর্তন শনাক্ত করা | |||
৩ | পোশাকশিল্পে ভবিষ্যৎ পেশার ক্ষেত্র ও দক্ষতা অনুসন্ধান | |||
৪ | সেবা, শিল্প ও কৃষি খাতের কয়েকটি পেশার দক্ষতা চিহ্নিত করা | |||
৫ | ২০৩০ সালের পেশার জন্য মৌলিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা চিহ্নিত করা | |||
৬ | কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষন সম্পর্কে ধারণা অর্জন | |||
৭ | কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়ার (কেসস্টাডির মাধ্যমে) কৌশল সম্পর্কে ধারণা অর্জন | |||
৮ | কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন | |||
মোট স্কোর: ৪০ | আমার প্রাপ্ত স্কোর | |||
অভিভাবকের মতামত: |
এই অ্যায়ে নতুন যা শিখেছি............
|
শিক্ষকের মন্তব্য
|
যে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করা হবে, সেটি নিজ এলাকা থেকে বেছে নিতে হবে। শিক্ষকের নির্দেশনায় দলগতভাবে আলোচনার মাধ্যমে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের প্রশ্নপত্র/চেক লিস্ট তৈরি করে নিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। এখানে দেওয়া নমুনাটি দেখে নিতে পারো।
প্রতিষ্ঠানের নাম:
তারিখ ও সময়
দলের সদস্যদের নাম ও আইডি:
১. | কোন ধরনের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে? | |
২. | কোন স্তরের শিক্ষার্থীরা এখন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে? | |
৩. | এই দক্ষতা বা অকুপেশনগুলো কি বাজার চহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচন করা হয়েছে? | |
৪. | এখান থেকে দক্ষতা এবং সার্টিফিকেট অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের পেশায় প্রবেশ করছে? | |
৫. | শিক্ষার্থীদের জন্য কী ধরনের সুযোগ- সুবিধা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে? | |
৬. | ভবিষ্যতে কোন ধরনের দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে (ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা)? | |
৭. | এখান থেকে কোর্স শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার সুযোগ কোথায় আছে |
আরও দেখুন...